বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপির সর্বোচ্চ ৩৮৮০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এলজিইডি বিদেশী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দুবাইয়ে বিদেশীদের গোপন সম্পদের পাহাড়, তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশীও সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের নির্দেশ বহাল ফের আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় উপজেলা নির্বাচন জনগণের সাথে প্রতারণা করার নির্বাচন : রিজভী মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক শারমিনকে বিয়ের প্রস্তাব সালমানের, কী জবাব দিয়েছিলেন অভিনেত্রী? কোলেস্টেরলের লাগাম টানবে যেসব ফল ইবরাহিম (আ.) যেভাবে হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন
যুক্তরাষ্ট্রে সংকটে শিশুর বেড়ে ওঠা

যুক্তরাষ্ট্রে সংকটে শিশুর বেড়ে ওঠা

স্বদেশ ডেস্খ:

যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের বেড়ে ওঠা নানামুখী সংকটে জড়িয়ে আছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে দ্য আটলান্টিক ডটকম-এ একটি লেখা প্রকাশিত হয়। যার ভাবানুবাদ করেছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র

যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ। তবে সেখানেও সন্তান লালন-পালন নিয়ে সংকট রয়েছে। আর এ সংকট মূলত অর্থনৈতিক। ওই দেশে যারা উপার্জন নিয়ে সংকটে থাকেন, তাদের সন্তান পালনের জটিলতাও বেশি। এ ছাড়া মার্কিনিরা পড়ালেখা এবং প্রতিষ্ঠার পেছনে বেশি ছোটে। যা তাদের সন্তানদের জীবনযাপন ও বেড়ে ওঠায় বিঘ্ন ঘটায়।

এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ লেখা হয়েছে দ্য আটলান্টিক ডটকম-এ। কয়েক বছর আগের এক সকালে লেখক ও পাবলিক পলিসি রিসার্চার স্টিফেন এইচ মুরে তার বড় মেয়েকে স্কুলে রেখে এসে এবং ছোট মেয়েকে সাঁতারে পাঠিয়ে বিশ্রামের জন্য একটি কফিশপে থামেন। সেখানে তিনি তার মেয়ের ক্লাসের এক ছেলে বন্ধুর বাবাকে দেখে তার কাছে যান। ওই ব্যক্তিও সন্তান দেখভালের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তারা দুজনই যুক্তরাজ্যে বাস করছিলেন পরিবারসহ। সম্প্রতি ওই ব্যক্তির স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে একটি কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে ওই ব্যক্তি সংশয়ে আছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন কি না। কারণ তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র বাচ্চাদের জন্য খুব বিপজ্জনক হবে।

এর উত্তরে মুরে কী বলেছিলেন তা মনে করতে পারছিলেন না। সম্প্রতি দ্য আটলান্টিক ডটকম-এ তিনি এ বিষয়গুলো লেখেন। তিনি জানান, ওই মন্তব্য তার মনে গেঁথে গেছে।

সংকট

মুরে লেখেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করি এবং বেড়ে উঠি। এর জন্য চরম কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করিনি। আমাদের অনেক কিছু আছে; উচ্চ মাঝারি আয়, বড় বাড়ি এবং বিশ্বের সবচেয়ে নামিদামি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। যখন আমি যুক্তরাজ্যের লোকেদের বলি যে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে এসেছি, তখন অনেকেই বলেন, ‘কেন আপনি এটি করবেন?’

এই লেখিকা জানান, কিন্তু যখন তিনি বাচ্চা পালনের বিষয়টি উল্লেখ করেন, তখন তাদের স্বর একটু পাল্টে যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মা-বাবাদের খ্যাতি আছে এই হিসেবে যে, তারা বাচ্চাদের অতিরিক্ত চাপে রাখেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাগত সাফল্য নিয়ে মোহগ্রস্ত থাকেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক ম্যাথিয়াস ডোয়েপ বলেছেন, আমেরিকানরা তাদের সন্তানদের বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন না। ইউরোপীয়দের কেউ কেউ এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, তাদের শিশু পালনের নিয়মও আমেরিকানদের মতো হয়ে যায় কি না।

মুরে লিখছেন, এ বিষয়ে তিনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অনেকে আমেরিকান মা-বাবাদের জন্য সহানুভূতি এমনকি করুণাও প্রকাশ করেছেন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাবা-মায়েরা কম সমর্থন পান। আর আমেরিকানদের জীবনে বন্দুক সহিংসতা তো রয়েছেই।

তিনি লিখছেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক অংশের লোকেরা দারিদ্র্য, সহিংসতা এবং অস্থিরতার মধ্যে জীবনযাপন করেন। যা তাদের তুলনায় অবশ্যই খারাপ। সেই তুলনায় আমেরিকানরা সত্যি খুব ভাগ্যবান। তবে তার মতে, ধনী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাবা-মায়ের উদ্বেগগুলো উপশম করা। যার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের দেখভালের দায়িত্ব মা-বাবার ওপরই ছেড়ে দেয়।

তার ভাষ্য, আমেরিকায় সন্তানের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং যত্ন নেওয়া পুরোপুরি পরিবারের ওপর নির্ভর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে নিশ্চিতভাবে বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই। ওইসিডি নামে একটি সংস্থা আছে যার সদস্য হলো ৩৮টি ধনী দেশ। সেসব দেশের মধ্যে পরিবারের জন্য সরাসরি নগদ সুবিধা সবচেয়ে কম দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিশু যত্ন, বিধিবদ্ধ বেতনসহ ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, যুক্তরাষ্ট্রে অনুপস্থিত।

এক কথায় কঠিন

মুরে বলছেন, শিশুদের লালন-পালনের কাজটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘এক কথায় কঠিন’। বাচ্চাদের লালন-পালন করার সময় একটি পূর্ণকালীন চাকরি অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। আবার যখন কেউ বাচ্চা পালনের সঙ্গে সঙ্গে খণ্ডকালীন কাজে যোগ দেন, তাও তার জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে খণ্ডকালীন কাজে এমন নয় যে সুবিধাজনক ছুটি পাওয়া যায়। অথবা দুটি বাচ্চার যত্ন নেওয়া সম্ভব এমন খরচ উঠে আসে ওই চাকরি থেকে।

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মুরে লেখেন, ২০১৮ সালে যখন আমি আমার দ্বিতীয় মেয়ের জন্ম দিই, তখন আমি চাকরি পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। যা আমার জন্য বিপর্যয়ের ছিল না। কারণ আমার স্বামীর চমৎকার স্বাস্থ্য বীমাসহ দুর্দান্ত চাকরি ছিল। আমি একটি ফ্রিল্যান্স লেখার ক্যারিয়ার শুরুর চেষ্টা করে আমার প্রথম বছর বাড়িতে কাটাই। কিন্তু খুব বেশিদূর যেতে পারিনি। তারপর ২০১৯-এর শেষে, আমরা যুক্তরাজ্যে চলে আসি।

তিনি জানাচ্ছেন, যুক্তরাজ্যে এরচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় সন্তান পালনের ক্ষেত্রে। সেখানে কিন্তু চাকরি সুরক্ষার নিশ্চয়তাসহ ছুটি পাওয়া যায়। যে ছুটিতে ৩৯ সপ্তাহ পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়। এ ছাড়া নগদ উপবৃত্তি, করমুক্ত শিশুযত্ন তহবিল, অসুস্থ ছুটি, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে। তিন থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি বছর কমপক্ষে ৫৭০ ঘণ্টার প্রারম্ভিক-শৈশব শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে যুক্তরাজ্যে এক বছর আগে পূর্ণ-সময়ের স্কুল শুরু করে শিশুরা।

তিনি লেখেন, আমি এখনো অনেক সময় অভিভাবকত্বকে অপ্রতিরোধ্য এবং কঠিন বলে মনে করি, যদিও আমি জানি যে আমি বেশিরভাগ লোকের চেয়ে ভালো পেয়েছি। তবে এখানে (যুক্তরাজ্যে) অভিভাবকত্ব করার জন্য আলাদা অনুভূতি রয়েছে, যা  আরও নিশ্চিত এবং নিরাপদ। কারণ, এখানে আমার সন্তানদের কল্যাণ আমার এবং আমার স্বামীর ওপর নির্ভরশীল নয়। একটি দেশের পরবর্তী প্রজন্মের নাগরিকদের গড়ে তোলার কাজটি একটি যৌথ উদ্যোগ হওয়া উচিত। সরকার যখন এর পরিবর্তে মা-বাবাদের ওপর সন্তান লালন-পালনের ভার ছেড়ে দেয়, তখন এটি একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠায় যে, ‘আপনার বাচ্চারা, আপনার সমস্যা’।

মাতৃত্বকালীন ছুটি

কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, দিনা (ছদ্মনাম) আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রে। যখন তিনি জানতে পারলেন যে তিনি গর্ভবতী, তখন তার স্বামী এবং পরিবারের অন্যরা বিদেশে। সবাই ধরে নিয়েছিল দিনা মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। কিন্তু তার অফিস সেই সময়ে সবেতন ছুটি দেয়নি। সন্তান জন্মের পর তিনি ‘ফ্যামিলি অ্যান্ড মেডিকেল লিভ অ্যাক্ট’র মাধ্যমে অবৈতনিক ছুটির জন্যও যোগ্য হননি। এমন অনেক নারীকে গর্ভাবস্থায় চাকরি পরিবর্তন বা খণ্ডকালীন কাজ করতে হয়েছিল।

আরও কিছু উদাহরণ দিয়ে মুরে দেখিয়েছেন যে, এভাবে যারা গর্ভকাল থেকে চাকরি ও আর্থিক কষ্টে ভোগে তাদের সন্তান লালন-পালনে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ আর্থিক সংকট সন্তানের বেড়ে ওঠায় প্রভাব ফেলে। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক বেড়ে ওঠার সময়ে বিঘ্ন ঘটায়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে এ বিষয়ের যেন সমাধান নেই। গর্ভাবস্থায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার অথবা খণ্ডকালীন চাকরিতে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ তাদের নেই।

আরেকজনের উদাহরণ দেন মুরে। তিনি লেখেন, একজন মায়ের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, যার নাম মেন্ডি হিউজ। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওয়ালমার্টে কাজ করেছেন তিনি। তার নিয়োগকর্তা তাকে শুধু রাতের ভাগে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কখনো কখনো মধ্যরাত পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হতো। যে কারণে তার ১০ বছর বয়সী ছেলের দেখাশোনা করতে পারতেন না ঠিকমতো। তাকে দেখার জন্য কাউকে খুঁজেও পাননি মেন্ডি।

যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি চলে গেলে কার্যত অন্য সবকিছুও হারাতে হয়। যেমন স্বাস্থ্যবীমা, কোম্পানির অবসর-সঞ্চয় পরিকল্পনা এবং সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাও। এমনকি অর্জিত আয়কর ক্রেডিট, চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটের ফেরতযোগ্য অংশ এবং প্রায়শই অভাবী পরিবারের জন্য অস্থায়ী সহায়তা চাকরির সঙ্গে আবদ্ধ। যাদের সামান্য বা কোনো আয় নেই তাদের জন্য কী সাহায্য আছে তা খুঁজে পাওয়া কঠিন যুক্তরাষ্ট্রে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সমাজকর্মের অধ্যাপক জেন ওয়াল্ডফোগেল বলেছিলেন, দরিদ্র হওয়ার শাস্তি আরও কঠিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের ডেনমার্ক বা জার্মানির তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের মতো দরিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি এবং যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ।

বন্দুক ও শিক্ষা

একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুরা অন্যান্য ধনী দেশের শিশুদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি মারা যায়। মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো বন্দুক সহিংসতা। আগ্নেয়াস্ত্র মার্কিন শিশু এবং কিশোর মৃত্যুর ২০ শতাংশের জন্য দায়ী। এ মর্মান্তিক পরিসংখ্যান দিয়ে এও বোঝায় যে বন্দুক মার্কিনি শৈশবকে বিকৃত করে।

বিশ্বের অনেক জায়গায় অভিভাবকত্বের সংকট আরও তীব্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে শিশু পালনের প্রকৃতি অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভিন্ন। অর্থনীতির অধ্যাপক ডোপকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রি-স্কুল অনেক বেশি অ্যাকাডেমিক। তিনি বলেছেন, আপনি যদি স্টকহোমে থাকেন এবং আপনার বাচ্চাদের অক্ষর শেখানো শুরু করেন আর একই সময়ে বেহালা শেখানোর ক্লাসে ভর্তি  করান, তাহলে আপনার সুইডিশ বন্ধুরা বলবে যে এটি প্রায় শিশু নির্যাতন।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অন্য দেশের শিশুরা স্কুলে যাওয়া, খেলা, ও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক স্বাধীনতা পায়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের এ স্বাধীনতা সীমিত। যা তাদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877